#সম্পূর্ণ_লাদাখ_ভ্রমণ_গাইড (#চতুর্থ_পর্ব) – #লাদাখের_কোন_পাস_কখন_খোলে_কখন_বন্ধ_হয় ?
#সম্পূর্ণ_লাদাখ_ভ্রমণ_গাইড
#চতুর্থ_পর্ব
#লাদাখের_কোন_পাস_কখন_খোলে_কখন_বন্ধ_হয় ?
লাদাখে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হলে এক বা একাধিক উঁচু পাহাড় পেরোতে হয় । পাহাড়ের উপর রাস্তার সব থেকে উঁচু জায়গা কে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় “লা” – ইংরেজি তে পাস । রোটাং লা – জোজি লা – খারদুং লা – নাম গুলো সব লাদাখ প্রেমীদের কাছেই খুব পরিচিত । পাহাড়ের সব থেকে উঁচু জায়গায় বলে শীতকালে বরফ পরে এইসব পাস বন্ধ হয়ে যায় – তখন সড়ক পথে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায় । লাদাখ ট্যুর প্ল্যান এর সাথে এইসব পাস খোলা বন্ধ থাকার বিষয়টা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত । কারণ শ্রীনগর থেকে গাড়িতে লে পৌঁছাতে হলে কিংবা মানালি থেকে গাড়িতে লে পৌঁছাতে হলে এইসব পাস কোন মাসে খোলে আর কোন মাসে বন্ধ হয় সেটা জানা খুব জরুরি ।
একটা বিষয় আগেই বলে রাখি – “লা” মানেই “পাস” । তাই বলা বা লেখা উচিত “জোজি পাস ” বা “জোজি লা ” কিংবা “রোটাং পাস ” বা “রোটাং লা “। কিন্তু আমরা অনেক সময়ই বলে থাকি “জোজি লা পাস ” বা “খারদুং লা পাস ” । ব্যাকরণ এর দিক থেকে সেটা ভুল কিন্তু এই ভুলটা লাদাখ প্রেমীরা মেনে নেন এবং আমার লেখাতেও আপনারা দয়া করে সেটা মেনে নেবেন ।
শ্রীনগর থেকে গাড়িতে লে যাবার সময় পেরোতে হয় তিনটি পাস (এক নং ছবি দেখুন )। প্রথমে শোন মার্গ পেরোনোর পরেই ১১৫৭৫ ফুট উচ্চতার জোজিলা পাস । এরপর কার্গিল পার হবার পরে প্রথমে ১২১৪০ উচ্চতার নামিক লা পাস । আর তার পরেই ১৩৪৭৮ ফুট উচ্চতার ফোটু লা পাস ।
অন্য দিকে মানালি থেকে লে যাবার সময় পেরোতে হয় পাঁচটি পাস (দুই নং ছবি দেখুন )। মানালি পেরোনোর পরেই ১৩০৫১ ফুট উচ্চতার রোটাং পাস । এর পরে ১৬০৪০ ফুট উচ্চতায় বারালাচা পাস । তারপর ১৫৫৫১ ফুট উচ্চতায় নাকি লা পাস । নাকি লার পরে ১৬৬০০ ফুট উচ্চতায় লাচুলুং লা পাস । আর তারপর ১৭৪৮০ ফুট উচ্চতায় তাংলাং লা পাস ।
আবার লে শহর থেকে নুব্রা ভ্যালি যাবার সময় পেরোতে হয় 18,379 ফুট উচ্চতার লাদাখের সব থেকে উঁচু এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম মোটর পাস খারদুংলা । যদিও অনেকের মতে খারদুংলা পাস এর উচ্চতা ১৭৫৮২ ফুট ।
শীতকাল এ বরফ পড়ে এই সব পাস বন্ধ হয়ে যায় । তাই শীতে শ্রীনগর বা মানালি থেকে গাড়ি তে লে পৌঁছানো যায় না । লাদাখ এর ট্যুর প্ল্যান এই সব পাস খোলা-বন্ধ থাকার সাথে সরাসরি জড়িত । তাই এবার আমরা জানবো লাদাখের কোন পাস বছরের কোন সময় খোলে এবং কোন সময় বন্ধ হয় ।
শ্রীনগর থেকে গাড়িতে লে পৌঁছানো নির্ভর করে জোজিলা পাস খোলা বা বন্ধ থাকার উপর । জোজি লা খোলা থাকলে সাধারণত নামিক লা আর ফোটু লা খোলা থাকে । কারণ ওই দুটি পাস অনেক প্রশস্ত – তাই সহজে রাস্তা বন্ধ হয় না ।
অন্যদিকে, মানালি থেকে গাড়িতে লে পৌঁছানো নির্ভর করে রোটাং পাস ও বারালাচা পাস খোলা বা বন্ধ থাকার উপরে ।
আর লে থেকে নুব্রা ভ্যালি যাবার জন্য পেরোতে হয় খারদুংলা পাস ।
লাদাখের এই সব পাস হয়ে যাতায়াত করে ভারতীয় সেনার গাড়ি ও ট্রাক । খারদুংলা পাস তো সিয়াচেন যাবার লাইফ লাইন । তাই সেনাবাহিনীর তরফ থেকে সব সময় চেষ্টা করা হয় যত বেশি দিন সম্ভব এই পাস গুলো খুলে রাখার । তবুও বরফ বেশি হয়ে গেলে পাস বন্ধ করতেই হয়।
শ্রীনগর থেকে লে যাবার পথে জোজিলা পাস খোলে মে মাসে । তবে শীতে বরফ কম পড়লে এপ্রিল ও খুলে যায় । আর জোজিলা পাস খোলা থাকে ডিসেম্বর এর ১০ তারিখ অবধি । যদিও শীতের শুরুতে বরফ কম পড়লে ডিসেম্বর শেষ পর্যন্তও খোলা থাকে । তবে এপ্রিল ও ডিসেম্বর এ জোজিলা পাস খোলা থাকার মধ্যে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে । কাজেই শ্রীনগর থেকে গাড়িতে লে -লাদাখ ভ্রমণ শুরু করলে কিংবা লে -লাদাখ ভ্রমণ শেষ করে শ্রীনগর হয়ে ফিরতে চাইলে জোজিলা পাস মে মাস থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খোলা থাকবে ধরে নিয়ে ট্যুর প্ল্যান বানানোই ভালো ।
অন্য দিকে মানালি থেকে লে যাবার পথে রোটাং পাস খোলে মে মাস এর তৃতীয় সপ্তাহে । আর বন্ধ হয় ডিসেম্বর এর প্রথম সপ্তাহে । তবে রোটাং পাস খোলা থাকলেও মানালী থেকে লে যাবার পথে আরও উঁচুতে অবস্থিত বারালাচা পাস কিন্তু জুনের ১৫ তারিখ থেকে অক্টোবর এর ১৫ তারিখ পর্যন্ত্য খোলা থাকে । মানালি থেকে গাড়িতে লে যেতে হলে রোটাং পাস এর এবং বারালাচা পাস দুটো পাসই খোলা থাকা জরুরি ।
মানালি থেকে লে রুটে রোটাং পাস আর বারালাচা পাস খোলা থাকলে বাকি তিনটি পাস – মানে নাকি লা , লাচুলুং লা এবং তাং লাং লা খোলা পাওয়া যায় । কারণ ওই তিনটি পাস অনেক চওড়া – তাই সহজেই বরফ পরিষ্কার করে রাস্তা খোলা রাখা সম্ভব হয় ।
আর লে থেকে নুব্রা যাবার পথে খারদুংলা পাস সারা বছরই খোলা থাকে । তুষারপাত এর পরে খারদুংলা পাস বন্ধ হয়ে গেলে সেনাবাহিনী দ্রুততার সাথে বরফ সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে দেয় । কারণ এই খারদুংলা পাস বন্ধ থাকলে সিয়াচেন বেস ক্যাম্প এ সেনাবাহিনীর জন্য রসদ পাঠানো ব্যাহত এর ।
কাজেই সংক্ষেপে যা দাঁড়ালো – জুনের ১৫ তারিখ থেকে অক্টোবর এর ১৫ তারিখ এর মধ্যে লাদাখ ট্যুর প্ল্যান করলে আপনি শ্রীনগর থেকে যাত্রা শুরু করে মানালি হয়ে ফিরতে পারবেন কিংবা মানালি থেকে যাত্রা শুরু করে শ্রীনগর হয়ে ফিরতে পারবেন । এই সময় এ সব পাস খোলা পাবেন – কোথাও আটকে পড়বেন না (তিন নং ছবি দেখুন )।
আর একটা কথা খেয়াল রাখবেন – প্রতি মঙ্গলবার রোটাং পাস বন্ধ থাকে । তাই মানালি থেকে যাত্রা শুরু করলে মঙ্গলবার বাদ দিয়েই করা ভালো । যদিও সাধারণত রোটাং পাসে লাদাখের গাড়িকে মঙ্গলবার ও ছেড়ে দেওয়া হয় তবুও মঙ্গলবারটা এড়িয়ে যাওয়াই ভালো |
তবে শুধু মাত্র রাস্তা খোলা থাকলেই লাদাখের সব জায়গায় যাওয়া যায় না – লাদাখের বেশিরভাগ জায়গায় যাবার জন্যই দরকার হয় পারমিট – ভারতীয়দের জন্য ILP বা ইনার লাইন পারমিট এবং বিদেশিদের জন্য লাগে প্রোটেক্টেড এরিয়া পারমিট ।
পরের পর্বে বলবো লাদাখ ভ্রমণের পারমিটের ব্যাপারে ।
পরের পর্বের লিংক : লাদাখ ভ্রমণ গাইড (পঞ্চম পর্ব )
বিশেষ পরিবেশ বার্তা – লাদাখ কিন্তু খুব পরিষ্কার জায়গা । এখানে কোনো প্লাষ্টিক প্যাকেট বা প্লাষ্টিক এর জল এর বোতল ফেলবেন না । এসব জিনিস গাড়িতেই রাখবেন পরে হোটেল বা তাঁবুতে ফিরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবেন ।
#ladakh #leh_adakh #ladakh_trip #ladakh_tour #ladakh_tour_guide #tsomoriri_lake #pangong_lake #nubra_valley #travel_with_Somjit #SomjitBhattacharyya #incredibleIndia