টাকি ভ্রমণ – প্রথম পর্ব
টাকি ভ্রমণ – প্রথম পর্ব
রোজকার ব্যস্ত জীবনে মাঝে মাঝেই এসে পরে একঘেয়েমি। দমবন্ধকর জীবনে একটু অক্সিজেন জোগাতে প্রয়োজন হয় কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু ক্যালেন্ডারের পাতা ঘেঁটেও যদি একটা ছুটির দিন না মেলে তাহলেও কুছ পরোয়া নেহি। কারন দিনে দিনেই ঘুরে আসা যায়, কোলকাতার অনতিদূরে এমনই এক অসাধারন জায়গা আছে, যায় নাম ‘ টাকি ‘। এখানে এলে ছুঁয়ে দেখা যায় প্রাচীন ইতিহাসকে। ইছামতীর হাওয়ায় আর সবুজ বনানীর ছোঁয়ায় নিজেকে তরতাজা করে নেওয়ার ইচ্ছে হলেই টুক করে ঘুরে আসুন টাকি থেকে।
সারসংক্ষেপ
জানেন কি টাকি কোথায় ? একদিনে কি ঘুরে আসা সম্ভব ? টাকি কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কি কি দেখবেন, কি কি কিনবেন, খরচ কেমন হবে, সবকিছু বিস্তারিত জানাবো টাকি ভ্রমণ সংক্রান্ত তিনটি পর্বে। জানাবো টাকির সেরা গেস্ট হাউজ গুলির নাম ও ফোন নম্বর। আর থাকছে টাকি যাবার ট্রেনের সময়সূচি। আজ প্রথম পর্ব।
টাকি ঠিক কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের হাসনাবাদ এলাকার একটি পর্যটনকেন্দ্রিক শহর হোলো টাকি। কলকাতা থেকে দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। এখানে ইছামতী নদীর জল ছুঁয়েছে দুই বাংলার শরীর। এ যেনো ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রীস্থল। নদীর এপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার টাকি এবং অপর প্রান্তে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার দেভাটা ও কালিগঞ্জ। ইছামতীর মাঝ বরাবর অবস্থিত ভারত ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমারেখা।
টাকি শহর কি কারনে এত জনপ্রিয় ?
প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ শহর টাকি। এই শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে ব্রিটিশ আমলের বেশ কিছু জমিদারবাড়ি, প্রাচীন দূর্গা মন্দির, সুপ্রাচীন নলকূপ ইত্যাদি। ইছামতী নদী তীরের এই শহর দেশভাগের স্মৃতি বহন করে চলেছে। একদা একই দেশের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা ইছামতী নদী বঙ্গভঙ্গের পর হয়ে ওঠে দুই দেশের কাল্পনিক সীমারেখা। এই সকল ঐতিহাসিক কারনে টাকি এতোটা জনপ্রিয়। আরও একটা কারন আছে, যা কিনা টাকির সেরা দ্রষ্টব্য। সুন্দরী,গড়ান, গেহয়া, কেওড়া, হোগলা, গোল পাতায় ঘেরা মিনি সুন্দরবন টাকির অন্যতম সেরা সম্পদ।
কলকাতার অনতিদূরে বছরের যে কোন সময়ে অল্প খরচে এক কি দুদিনে ঘুরে আসা যায় টাকি থেকে। একটি দুটি নয়, বেশ অনেকগুলি স্থান রয়েছে টাকিতে দেখবার মতো। শীতকালে বাঙালির প্রিয় পিকনিকের জায়গাগুলির মধ্যেও কিন্তু টাকি অন্যতম। তবে টাকির জনপ্রিয়তার সবথেকে বড় কারন হলো ইছামতী নদীতে বিজয়া দশমীর ভাসান। প্রতিবছর বিজয়া দশমীতে দুই দেশের মানুষ নৌকোয় করে নিয়ে আসেন মা দুর্গার প্রতিমা ইছামতী নদীতে বিসর্জন দিতে । অনন্য সুন্দর সেই দৃশ্য দেখার জন্য ইছামতীর দুই পাড়ে তখন দুই দেশের দর্শনার্থীর জোয়ার নামে। এছাড়া টাকি রাজবাড়ি ঘাট থেকে জলপথে বাংলাদেশ বর্ডার ও তিন নদীর মোহনা পর্যন্ত নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতাও এক কথায় অসাধারন।
টাকি ভ্রমণের সেরা সময় কখন ?
মন চাইলে বছরের যেকোনো সময় যাওয়া যেতে পারে ঠিকই, তবে সেরা সময় বলতে গেলে অবশ্যই শীতকাল হলো টাকি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে সারাদিন ঘুরে বেড়ানো যায় টাকির আনাচে কানাচে। শীতে টাকির আরও একটি আকর্ষন হোলো পাটালি গুড়। শুনলে অবাক হবেন যে টাকিতে বেশ কম দামে খুব ভালো মানের পাটালি গুড় পাওয়া যায়।
টাকি ভ্রমণের আরও একটি সেরা সময় হলো দূর্গা দশমীর দিন। প্রত্যেক বছর বিজয়া দশমীতে ইছামতী নদীর জলে ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিমা একই সাথে বিসর্জন হয়। নৌকা করে প্রতিমা নিয়ে এসে মাঝ নদীতে বিসর্জনের দৃশ্য দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হন। সম্প্রীতি ও ভাইচারার এই দৃষ্টান্ত আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় কিনা জানি না।
টাকি পৌঁছব কীভাবে ?
কলকাতা থেকে টাকি আসার জন্য সড়কপথ বা রেলপথ যে কোনো একটি বেছে নিতে পারেন। নিজের গাড়িতে সড়কপথে আসতে চাইলে বারাসাত চাঁপাডালি মোড় হয়ে হয়ে অথবা বাসন্তী হাইওয়ে ধরে চলে আসুন টাকি। ধর্মতলা থেকে হাসনাবাদগামী বাসে এলে নামতে হবে টাকি স্টপেজে। এসপ্ল্যানেড হাসনাবাদ রুটে ২৫২ নম্বরের একটি লোকাল বাস প্রতিদিন চলাচল করে, এতেও আসতে পারেন। তবে সময় লাগবে অনেক বেশী।
টাকি আসার সবথেকে সহজ ও আরামদায়ক উপায় হলো শিয়ালদহ ষ্টেশন থেকে শিয়ালদহ- হাসনাবাদ লোকাল ধরে আসা। দু ঘন্টার মধ্যেই পৌছে যাওয়া যায় টাকিরোড ষ্টেশন। এই লাইনে দিনভর অনেকগুলি লোকাল ট্রেন চলে। একটু সকালের দিকে ট্রেন ধরে দশটার মধ্যে টাকি পৌছে সারাদিন ঘুরে আবার বিকেলের ট্রেন ধরে ফিরে আসুন কলকাতা। শিয়ালদহ হাসনাবাদ লোকালে মাথাপিছু ভাড়া পরবে মাত্র কুড়ি টাকা। অর্থাৎ আসা যাওয়া মিলে চল্লিশ টাকা খরচ হবে জনপ্রতি। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, সকালে যাওয়ার সময় ফেরার টিকিটও কেটে রাখবেন, তাতে সময়ের একটু সাশ্রয় হবে। আপনাদের সুবিধার জন্য হাসনাবাদ লোকালের সময়সূচি এখানে দিয়ে দিলাম।
33511 SDAH HNB LOCAL (DAILY )
SDAH — 05:20
HNB — 07:30
( 77 Km ) 02h 10m
33513 SDAH HNB LOCAL ( DAILY )
SDAH — 06:12
HNB –08:18
(77 Km) 02h 06m
33515 — SDAH HNB LOCAL ( DAILY )
SDAH– 07:40
HNB — 09:55
( 77 Km ) 02h 15m
33517 — SDAH HNB LOCAL ( DAILY )
SDAH — 08:22
HNB — 10:32
( 77 Km ) 02h 10m
33519 — SDAH HNB LOCAL ( DAILY )
SDAH — 09:20
HNB — 11:30
( 77 Km ) 02h 10m
33521 — SDAH HNB LOCAL
MON TUE WED THU FRI SAT
SDAH — 11:07
HNB — 13:10
( 77 Km ) 02h 03m
33523 — SDAH HNB LOCAL ( DAILY )
SDAH — 12:18
HNB — 14:23
( 77 Km ) 02h 05m
33525 — SDAH HNB LOCAL ( DAILY ) SDAH — 14:20
HNB — 16:37
( 77 Km ) 02h 17m
33527 — SDAH HNB LOCAL ( DAILY )
SDAH — 14:54
HNB — 17:11
( 77 Km ) 02h 17m
33529 SDAH HNB LOCAL ( DAILY )
SDAH — 18:00
HNB — 20:07
( 77 Km ) 02h 07m
33531 SDAH HNB LOCAL ( DAILY )
SDAH — 19:46
HNB — 21:50
( 77 Km ) 02h 04m
33533 SDAH HB LOCAL ( DAILY )
SDAH — 22:15
HNB — 00:26
( 77 Km ) 02h 11m
টাকি তে থাকার ব্যাবস্থা কি আছে ?
টাকিতে রাত্রিবাস করতে চাইলে কোনও অসুবিধা নেই। কারন টাকিতে থাকার জন্য আছে বিভিন্ন মাপের হোটেল ও ট্যুরিস্ট লজ। আর আছে কয়েকটি ভালো রিসর্ট। প্রায় সবকটি হোটেল , রিসর্ট ও ট্যুরিস্ট লজই ইছামতীর তীরে অবস্থিত, তাই লজের বারান্দায় বসে নদীর শীতল হাওয়া গায়ে মেখে দুচোখ ভরে নদীর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন।
কলকাতা থেকে #makemytrip , ytra.com ইত্যাদি website এর মাধ্যমে অনলাইনে হোটেল বুক করে যেতে পারেন। তবে বিজয়া দশমী বাদ দিয়ে বছরের বাকি সময়ে টাকি গিয়ে হোটেলে রুম পেতে খুব একটা অসুবিধা হবে না।
টাকি তে আমরা ছিলাম টাকি মিউনিসিপ্যালিটি গেস্ট হাউজে,যার আর এক নাম নীপেন্দ্র গেস্ট হাউজ ( নীপেন্দ্র অতিথিশালা )। এটি হলো টাকি পৌরসভার গেস্ট হাউজ। ফোন নম্বর — ০৩২১৭ ২৩৩ – ৩২৮
রিভার ফেসিং রুমের ভাড়া ৬০০ টাকা থেকে শুরু।
ব্যাক সাইডের রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু।
এছাড়া আরও কিছু গেষ্ট হাউজ ও রিসর্টের নাম, ফোন নম্বর দিয়ে দিলাম……
হোটেল সোনার বাংলা টাকি ( টাকির সবথেকে বিলাসবহুল হোটেল )
ফোন নম্বর :– ০৯৮৩৬৩ , ৬৬৬৮০
রূপসী বাংলা লজ ( রাজবাড়ী ঘাট )
ফোন নম্বর :– ০৩২১৭২ ৩৩৯৯৯
দিশা গেষ্ট হাউজ ( রাজবাড়ী ঘাট )
ফোন নম্বর :– ০৮৭৬৮৭ ৮৮৫০২
শান্তিনিকেতন গেষ্ট হাউজ
ফোন নম্বর :– ০৮০১৬০ ৪৩৭৪৪
সুহাসিনী গেষ্ট হাউজ
ফোন নম্বর :– ০৯৩৩০৮ ২৬৭৭৯
আম্রপালি গেষ্ট হাউজ
ফোন নম্বর ;– ০৩২১৭২ ৩৪৪৭১
এছাড়াও ওখানে পাবেন আরও কিছু ভালো গেস্ট হাউজ যেগুলির ফোন নম্বর পেলাম না, কিন্তু নামগুলি নিচে দিয়ে দিলাম। আশাকরি গুগুলে নম্বর পেয়ে যাবেন।
টাকি সানরাইজ গেস্ট হাউজ
টাকি সিটি গেস্ট হাউজ
বিশ্রাম বাগান বাড়ী ( টাকি বিসর্জন শ্যুটিং স্পটের সামনে ) — পিকনিকের জন্য আদর্শ ঠিকানা
হোটেল সাথী
টাকি হেরিটেজ গেস্ট হাউজ
পার্বণ গেস্ট হাউজ
টাকি ইকো ট্যুরিজম পার্ক গেস্ট হাউজ
একটা কথা মনে রাখতে হবে টাকির যেকোনো গেস্ট হাউজে থাকার জন্য প্রত্যেক অতিথিকে তার সচিত্র পরিচয় পত্র দেখাতে হবে। শুধু গেস্ট হাউজেই নয়, টাকি ভ্রমণে আসলে নিজেদের সচিত্র পরিচয় পত্র কিন্তু অতি অবশ্যই সঙ্গে করে নিয়ে আসা জরুরি। যেহেতু এটি ভারত ও বাংলাদেশ বর্ডার এলাকা তাই আপনকে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ সঙ্গে রাখতেই হবে।
বি দ্রঃ :– আজকের টাকি ভ্রমণের প্রথম পর্ব এখানেই সমাপ্ত করছি। আগামী অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্বে আমরা জানবো টাকিতে দর্শণীয় স্থান কি কি আছে ? সেগুলির বিশদ বিবরণ থাকবে ।
আর তৃতীয় অর্থাৎ শেষ পর্বে আমরা জানবো টাকি ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু জরুরী তথ্য ও কিছু সতর্কতা মূলক টিপস্ । আর সেই সঙ্গে এই ভ্রমণের খরচাপাতি সম্পর্কে কিছু ধারণা দেবার চেষ্টা করবো।